বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

গাজীপুর প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ থেকে টানা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে আসতে পেরেছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আমাদের আরো আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো সেখানে আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনী বিশেষ করে আনসার বাহিনীও সেভাবেই স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের উন্নয়নের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর আমরা পেছনে ফিরে তাকাবো না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরের আনসার-ভিডিপি একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৪তম জাতীয় সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নিরাপদ করতে চাই। আমাদের গ্রামগুলোও স্মার্ট গ্রাম হিসেবেই গড়ে উঠবে। সেখানে কোন মানুষ দরিদ্র থাকবেনা, ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, আমরা ইতিমধ্যে প্রতিটি ভূমিহীন-গৃহহীণ মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। আমরা সেভাবেই প্রত্যেকটা মানুষের জীবন-যাপন এবং সুন্দরভাবে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব।’

প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টার দিকে আনসার-ভিডিপি একাডেমির অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক এবং আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট মো. নুরুল হাসান ফরিদী অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন ও মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। সুসজ্জিত প্যারেড তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। কুচকাওয়াজ শেষে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা সদস্যদের বিভিন্ন সাহসিকতার ও সেবা পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। সাহসিকতা এবং সেবামূলক কাজের জন্য এবার এই বাহিনীর ১৮০ সদস্যদের পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আনসার একাডেমিতে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। তিনি ৪৪তম জাতীয় সমাবেশের কেক কাটেন। পরে তিনি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী আয়োজিত কোরিওগ্রাফি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন, গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো: আখতারউজ্জামান, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো: জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম উদ্দিন, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট মো. নূরুল হাসান ফরিদী প্রমুখ অংশ নেন।

প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ১৪ এবং ২০২৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে যখন অগ্নি সন্ত্রাস, রেলে আগুন দেয়া, রেল লাইন কেটে ফেলা, মানুষকে হত্যা করাসহ বিএনপি জামাত যে ধ্বংসাত্মক কাজ করেছিল তখন জাতীয় নিরাপত্তা বিধানে আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। এজন্য আমি সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে প্রথম সরকারে আসার পর থেকেই এই বাহিনীর উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে আজকে এই বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সুনাম অর্জন করে যাচ্ছে। আমাদের এই বাহিনী গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত কাজ করে থাকেন। আমরা গ্রাম উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’, এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই আনসার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। তাছাড়া যে কোন দুর্যোগ দূর্বিপাকে আনসার বাহিনীর সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের সহযোগিতা করে। কখনো ঝড়, বন্যা বা অগ্নিকান্ড ঘটে এরকম যে কোন ঘটনায় আমরা দেখেছি আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৬১ লাখ। দুটি নারী ব্যাটালিয়ানসহ এতে ৪২টি ব্যাটালিয়ান রয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পার্বত্য এলাকায় শান্তিশৃংখলা রক্ষায় এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন উত্তোরণ’ এ দেশের স্বাধীনতা ও স্¦ার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আনসার বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করাই সরকারের কাজ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের সরকার জনগণের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পেরেছে। যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে।

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করে যাবেন। ইতিমধ্যে আমরা পুরাতন আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন করেছি। ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’ আমরা ইতিমধ্যে পাশ করে দিয়েছি। এতে করে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের মতো প্রথম দিন থেকেই স্থায়ী হওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছি। এছাড়া উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডার, ইউনিয়ন প্লাটুন কমান্ডার ও ইউনিয়ন দলনেতা/দলনেত্রীদের আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে ও মাসিক সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাধারণ আনসার সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি এবং রেশনসামগ্রীর উপকরণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নারী ভিডিপি সদস্যদের জন্য আধুনিক ডিজাইনের নতুন শাড়ি প্রবর্তন করা হয়েছে। ’

ক্রীড়ার ক্ষেত্রে ও সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে আনসার বাহিনীর বলিষ্ঠ অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যেন অব্যাহত থাকে তারও ব্যবস্থা করতে চাই। কারণ মানুষের পেটের ভাতের সাথে সাথে তাদের মনোরঞ্জণের ব্যবস্থা করা এবং খেলাধূলা, শরিরচর্চার মাধ্যমে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য। ‘বাংলাদেশ গেমস’ এ পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং এই বাহিনীতে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কারণ সরকার চায় এখান থেকে উদীয়মান এবং খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ তৈরী হবে। তারা যেন দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনতে পারে সে পদক্ষেপও সরকার নেবে।’

শেয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম

বিডি ওয়ার্ল ২৪ ডট কম (bdworld24.com)